ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে পলায়নকারী বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে গত ১৫ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ও হাতিয়ে নিয়েছে ওরিয়ন গ্রুপ। কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প বাগিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরকম নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান করতে গিয়ে নিজের ডাইভারকে বানিয়েছে পার্টনার। এছাড়া যাত্রাবাড়ি-গুলস্তানে নির্মিত হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণেও ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ওবায়দুল করিম ফ্লাইওভার থেকে আদায়কৃত টোলের মাত্র ৪০ শতাংশ হিসাবে দেখান। বাকি ৬০ শতাংশ টোলের টাকা গোপনে সরিয়ে নিচ্ছেন। ১২ বছর ধরেই চলছে এ ঘটনা।
জানা গেছে, অনুমোদনের শুরুতে ৩ বছর মেয়াদে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলেও দফায় দফায় এই মেয়াদ বাড়িয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকা। একই কেন্দ্র সরকারের কাছে একাধিকবার বিক্রি করা হয়। এসব কেন্দ্রের মোট বিনিয়োগের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগকারীরা দেয়, বাকিটা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে মেটানো হয়। এভাবেই ১৫ বছর ধরে লুটপাট চালিয়েছেন ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধার ওবায়দুল করিম। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও এসব অপকর্মের মূল হোতা ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধারের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা দেখে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
সূত্র মতে, দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে মহালুটপাটের ঘটনায় ওরিয়ন গ্রুপের আগ্রাসন ছিল ভয়াবহ। এসব অপকর্মে সহযোগী হিসেবে ওবায়দুল করিম বেছে নিয়েছেন বিগত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। এর মধ্যে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে বেছে নিয়েছেন তৎকালীন সরকরের প্রভাবশালী মন্ত্রী মির্জা আজমকে। তাকে ৪০ শতাংশ শেয়ার দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবসায়িক পার্টনার করা হয়েছে ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে। তাকে ৩০ শতাংশ ছেড়ে দিয়ে ৭০ শতাংশ নিজে রেখেছেন ওবায়দুল করিম। ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেডের ৪ শতাংশ শেয়ার নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে এবং ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ সাবেক মন্ত্রী মির্জা আজমকে দিয়ে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানো হয়েছে। এ ছাড়া ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেডের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার দিয়ে মির্জা আজমকে পার্টনার বানিয়েছেন ওবায়দুল করিম।
জানা গেছে, চুক্তির শর্ত অনুসারে ৩ বছরের মেয়াদে প্রকল্পের দায়িত্ব পেলেও পরবর্তী সময়ে সেই মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়িয়ে নিয়েছেন। মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ওবায়দুল করিম হাতিয়ে নিয়েছেন ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অস্তিত্বহীন কোম্পানিও রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কিছুদিন আগে অন্তত সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন ওবায়দুল করিম। এখানেই শেষ নয়, বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে ওরিয়নের ৭টি কোম্পানি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের ৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো রকম দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই কোনো কাজে আসেনি। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনসংক্রান্ত ওরিয়ন গ্রুপের ৭টি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে রাষ্ট্রের কাছ থেকে ৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড, ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা লিমিটেড, ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা ইউনিট-২ লিমিটেড, ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড এবং ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেড। এর মধ্যে ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা ইউনিট-২-এর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধি ভঙ্গ করে শুধু ওরিয়নের ক্ষেত্রে (বিদ্যুৎ খাত) সমস্যাজর্জরিত জনতা ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা-২ লিমিটেডের (ওপিডিএল-২) নামে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এই ঋণ অনুমোদন করা হয়। নবায়নযোগ্য সোলার পাওয়ার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে দুবাইভিত্তিক কোম্পানি এনারগন টেকনোলজি অ্যান্ড ফার্স্ট জেন এনার্জি এবং চায়না সানার্জি কোম্পানির নামে ১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা ঋণ নেন ওবায়দুল করিম। এই ঋণের খেলাপি টাকার পরিমাণ অন্তত ৫০০ কোটি। এই কোম্পানিতে ওবায়দুল করিমের পার্টনার তার ড্রাইভার খালেদ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা ইউনিট-২-এর নামে ঋণ নেওয়া হয় ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। এটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এই প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণও ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষ্যে ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেডের নামে ৮১১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এখানেও খেলাপির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের নামে ২৩৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেডের নামে ঋণ নেওয়া হয় ৬২৫ কোটি টাকা। ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের নামে ঋণ ১০২ কোটি টাকা এবং ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ঋণ নেওয়া হয় ৩৪০ কোটি টাকা। এভাবে বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে ওবায়দুল করিম হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ওরিয়ন গ্রুপ হবার পেছনেও রয়েছে এক অন্যরকম গল্প। যে গল্প হার মানায় রূপকথাকেও। এক কথায় বন্ধুর সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজে হয়ে গেলেন এক রাজ্যের মহারাজা। ভয়ঙ্কর বিশ^াসঘাতকতা গল্প শুরু ২০০৩ সালে। এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে আসেন সেদেশের ধনকুবের ব্যবসায়ী মাজেদ আহমেদ সাইফ বেলহাসা। উদ্দেশ্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা। ঘটনাচক্রে যোগাযোগ হয় ওবায়দুল করিমের সঙ্গে। হয় বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেন ধনকুবের বেলহাসা। বেলহাসা ঢাকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজে অর্থ বিনিয়োগ করেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় কূটচাল চালতে থাকেন ওবায়দুল করিম। ফন্দি আঁটেন পুরো ব্যবসা নিজের করে নেয়ার। সেটিও করে ফেলেন অল্প দিনেই। বেলহাসার প্রকল্পের নামে ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার শুরু করেন ওবায়দুল করিম। এ কাজে সহায়তা নেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। স্বাক্ষর জাল করে কোম্পানির নামও বদলে দেন। বিষয়টি জেনে যায় বেলহাসা। অন্যদিকে বেলহাসা থেকে নাম পাল্টে হয়ে যায় ওরিয়ন গ্রুপ। এ গ্রুপের চেয়ারম্যান হন ওবায়দুল করিম। এরপর শুরু হয় তার অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, শেয়ার প্রতারণা, অংশীদারদের শেয়ার দখল। শেষ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত হয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন বেলহাসা।
জানা গেছে, ঢাকার প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান যে ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে এই ওরিয়ন গ্রুপের তত্ত্বাবধানেই। এতে ক্ষমতা খাটিয়ে প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা লোপাট করে রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঢাকা সিটি করপোরেশন যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় ধরে ৬৭০ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী ওবায়দুল করিম বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০ শতাংশ সুদে ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে জনতা ব্যাংক-২০০ কোটি, এসআইবিএল ব্যাংক-৫০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক-১৫০ কোটি, আইসিবি ব্যাংক-৫০ কোটি, রূপালী ব্যাংক-১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। তবে ওবায়দুল করিম তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আসিকুর রহমান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের যোগসাজশে তথাকথিত আরবিট্রেশনের নামে চুক্তির ৬৭০ কোটি টাকা থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। তবে আরবিট্রেশন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স ইনফ্রাক্টাকচার লি. ইন্ডিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তিমতে, ফ্লাইওভারে কনস্ট্রাকশন কাজে মোট খরচ হয় ৭৮৮ কোটি টাকা। অথচ প্রকল্প ব্যয় ধরা ছিল ৬৭০ কোটি টাকা। কিন্তু অবৈধভাবে ব্যয় বর্ধিত করা হয় ২৩৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বন্ড ডিসকাউন্টের মাধ্যমে বন্ধক রেখে ২১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরমধ্যে ১৩৬২ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয় এমন তথ্যও প্রকাশ পায়। বেলহাসা ও একম ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যাংক একাউন্টে লেনদেনের স্টেটমেন্ট ঘেঁটে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্পে ৭৯০ কোটি টাকা খরচের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি ১৩৬০ কোটি টাকার কোনো হদিস মেলেনি।
জানা গেছে, ওবায়দুল করিম যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে আদায়কৃত টোলের মাত্র ৪০ শতাংশ হিসাবে দেখান। বাকি ৬০ শতাংশ টোলের টাকা গোপনে সরিয়ে নিচ্ছেন। ১২ বছর ধরেই চলছে এ ঘটনা। ফ্লাইওভার ঘুরেও দেখা গেছে, নির্দিষ্ট টোল প্লাজা বাদ দিয়েই ফ্লাইওভারের বিভিন্ন পয়েন্টে চালকদের হাতে রশিদ ধরিয়ে টোল আদায় করছেন ওরিয়নের পোশাক পরিহিত কিছু ব্যক্তি। এভাবে টাকা নেয়ার হিসাব থাকছে না কম্পিউটারের সফ্টওয়্যারে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের হিসাব বলছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে প্রতি ঘণ্টায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলে ৮ থেকে ১০ হাজার। সে হিসাবে টোল আদায় হওয়ার কথা বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর ওরিয়ন হিসাব দিচ্ছে বছরে ১৪০ কোটি থেকে ১৭৮ কোটি টাকার। এ ছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণ নকশা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নিচের রাস্তা বন্ধ করে পায়ার ও ডিভাইডার করা হয়েছে যাতে গাড়ি কম চলতে পারে।
২০০৩ সালের মে মাসে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার প্রকল্পটি দুই স্তর বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে যোগদান করা দাতাদের কারিগরি অভিজ্ঞতা ও আর্থিক যোগ্যতা চাওয়া হয়। সে সময় আন্তর্জাতিক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে দরপত্রে অংশ নেয় ওবায়দুল করিম। সেই প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ৯ই আগস্ট বেলহাসা বরাবর লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) ইস্যু করেন সিটি করপোরেশন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে যাত্রাবাড়ী- গুলিস্তান প্রকল্পটি বেলহাসা একম অ্যান্ড এসোসিয়েটস সরকারের অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করে। দরপত্র দাখিল করে বেলহাসা দুবাই ও একম বাংলাদেশ নামে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় চুক্তি অনুযায়ী বেলহাসা ৬০ শতাংশ ও একম ৪০ শতাংশ বিডার ছিলেন। কিন্তু দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুবাইভিত্তিক কোম্পানি বেলহাসা প্রধান বিডার হিসাবে অংশ নিলেও ওবায়দুল করিম একম ইঞ্জিনিয়ারিং বাদ দিয়ে নিজে ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে শেয়ার হোল্ডার করে দেন। অথচ কাগজপত্র বলছে, শুরুতে দুবাইয়ের নাগরিক শেখ মাজেদ আহমেদ সাইফ বেলহাসা কোম্পানির ৮০ শতাংশ ও ওবায়দুল করিম ও তার পরিবারের সদস্যরা মাত্র ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ২০০৫ সালের ২০শে মার্চ দুবাই নাগরিক বেলহাসার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানিটির রেজিস্ট্রেশন নিজের নামে করে নেন ওবায়দুল করিম। অথচ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে কোথাও ওবায়দুল করিম, ছেলে সালমান করিম ও মেয়ের জামাই মেহেদী হাসানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে বেলহাসাকে বের করে দিয়ে সম্পূর্ণ কোম্পানি দখল করে নেয় ওবায়দুল করিম পরিবার। ভুয়া চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বেলহাসার ৮০ শতাংশ শেয়ার থেকে মাত্র ৫ শতাংশ শেয়ার রেখে বাকি শেয়ার নিজের একম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নামে লিখে নেন। পরে বেলহাসা পরিবার দাবি করেন করিম পরিবারের সঙ্গে তাদের কোনো চুক্তি হয়নি। যে কাগজপত্র দেখানো হয়েছে তা ভুয়া।
ওবায়দুল করিম ও তার পরিবারের সদস্যরা শুধুমাত্র যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওয়ার নির্মাণ প্রকল্পেই নয়, অনিময় করে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পেও। দখল ও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে ওরিয়ন গ্রুপের অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করেও চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।