বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে যাচ্ছে। এই বিপ্লবের মূলে আছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। বাংলাদেশেও আইসিটির প্রসার দ্রুত হচ্ছে। অনেকেই আইসিটি নির্ভর ক্যারিয়ার গঠনের চেষ্টা করছেন। কেউবা হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সার। আবার কেউ কেউ হচ্ছেন সফল। তেমনি এক সফল ফ্রিল্যান্সারের কথা জানাচ্ছেন
মো. সাব্বির খান, বাড়ি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর গ্রামে। বাবা মো. জয়দুল খান একজন কৃষক, মা ছিলেন গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সাব্বির সবার ছোট। সাব্বির রানীপুকুর হাই-স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং রংপুর মুসলিম এইড ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করেন।
এরপর সাব্বির উচ্চ শিক্ষার জন্য চায়না যান। কিন্তু হঠাৎ করে মা অসুস্থ হওয়াতে চায়না থেকে দেশে ফেরে সাব্বির। দেশে ফেরার কয়েকদিন পরেই তার মা মারা যাওয়ায়, সাব্বিরের বাবা আর তাকে চায়না যেতে দেননি।
ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ ছিল সাব্বিরের। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় মোবাইলে ইন্টারনেট নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করত। যদিও ওই সময় থ্রি-জি ইন্টারনেটের যুগ ছিল না। তারপরও টু-জি দিয়ে কোনো রকম ইন্টারনেট চালানোর চেষ্টা করতো। অভাবের সংসারে সাব্বির অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন। নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন সাব্বিরের পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
এরপর সাব্বির রানীপুকুর ছেড়ে রংপুর শহরে যান। সেখানে এক বন্ধুর ভাইয়ের সাহায্যে একটা চাকরি পান সাব্বির। ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করার পড়েও নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন তিনি। এরপর সেখানে একবছর চাকরি করে পড়ালেখা চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে ও বাবার থেকে কিছু টাকা নিয়ে এসএসসির পর ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটা কম্পিউটার কেনেন। এই কম্পিউটারই হয় তখন তার সোনার হরিণ। কম্পিউটার দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে সাব্বির এখন মাসে আয় করেন চার-পাচ লাখ টাকা।
সাব্বির বলেন, ‘কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা ভর্তি হয়ে ওই কম্পিউটার দিয়ে একা একা কাজ করার চেষ্টা করতাম। নিজের খরচ দিয়ে নিজের পড়াশোনা শেষ করার চেষ্টা করতাম। খুব অভাবে দিন কাটাইছি। এমনও দিন গেছে যে একবেলা ভাত খাইতে পায়নি তারপরও নিজের বাবাকে কখনও টাকার জন্য চাপ দেইনি, যে বাবা আজকে টাকা লাগবে। আমি সব সময় বোঝার চেষ্টা করতাম যে বাবারা কত কষ্ট করে আয় করে এবং কত কষ্ট করে সন্তানদের খাওয়ায়। কষ্টের মাঝেই কেটে গেলো কয়েকটি সেমিস্টার। কিন্তু এভাবে আর কত! কিছুতো একটা করতে হবে। তাই আমার কাছের বন্ধু ও বড় ভাইয়ের পরামর্শে কম্পিটারে ফ্রিল্যান্সিং করার চিন্তা করলাম’।